
স্টাফ রিপোর্টারঃ
ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন বিআরটিএ অফিসে দুর্নীতির অভিযোগে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি হলেও এখনো চট্টগ্রাম জেলা সার্কেলে বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) রায়হানা আক্তার উর্থী।
২০২৫ সালের ৭ মে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ অভিযান চালায়। এ সময় রায়হানা আক্তার উর্থীর অফিসেও তল্লাশি করা হয়। সেখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ও রুট পারমিটসহ বিভিন্ন সেবায় ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ মেলে।
সূত্র জানায়, রায়হানা আক্তার উর্থী এর আগে চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল-১ ও ২ এবং জেলা সার্কেল মিলিয়ে প্রায় ৯ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি আবারো চট্টগ্রাম জেলা সার্কেলে কর্মরত।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি সবসময় প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। শেখ হাসিনা সরকারের সময় চাকরিতে যোগদানকারী এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ মহলে পরিচিত। চাকরিজীবনের পুরোটা সময় মূলত চট্টগ্রাম ও ঢাকা হেড অফিস ছাড়া অন্য কোথাও বদলি হননি।
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার কারণেই তিনি দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ সার্কেলে টিকে থাকতে পেরেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকার পরিবর্তনের পরও রায়হানা আক্তার উর্থী ঘুষের মাধ্যমে সেবা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা হয়, রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেসের মতো সেবা ঘুষ ছাড়া কোনোভাবে অনুমোদন করা হয় না। তার অফিস কক্ষ সবসময় বন্ধ থাকে এবং দালাল ছাড়া সেখানে প্রবেশ করা যায় না।
ঘুষের বিনিময়ে মালিক বা যানবাহন উপস্থিত না থাকলেও কাগজপত্রে রেজিস্ট্রেশন বা ফিটনেস সম্পন্ন করে দেওয়া হয়। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, এসব সেবার সময় মালিক ও যানবাহনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
একজন ভুক্তভোগী জানান, দালাল ছাড়া ফাইল জমা দিলে নানা অজুহাতে তা ফেরত দেওয়া হয়। অথচ দালালের মাধ্যমে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিলে ত্রুটিপূর্ণ কাগজও অনুমোদন হয়ে যায়।
এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, তিনি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। ভুয়া ফিটনেস সনদ, নকল রেজিস্ট্রেশন ছাড়পত্র, সরকারি সিল জালিয়াতি এবং ঘুষ বাণিজ্যের একাধিক প্রমাণও পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি এক জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভারদের রানার কার্ডে কিছু না লিখেই ফেরত পাঠানো হচ্ছে। পরে দালালরা যাদের নাম রাত্রে লিখে রাখে, তারাই পাশ করছে।
একজন ভুক্তভোগী বলেন, “প্রতিদিন অসংখ্য ড্রাইভার কেঁদে ফিরে যায় এখান থেকে। টাকা না দিলে দক্ষ চালকরাও ফেল হয়ে যায়, আর টাকা দিলে নামমাত্র পরীক্ষা দিয়েই পাশ।”
দালালরা প্রতিজন চালকের কাছ থেকে ৩,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত নেয়।
এভাবে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন রায়হানা আক্তার উর্থী ও তার দালাল চক্র।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তার নামে-বেনামে ঢাকায় রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও জমি, এছাড়াও ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকার অপ্রদর্শিত অর্থ মজুদ রয়েছে।
চট্টগ্রামের সৎ কর্মকর্তা ও সচেতন নাগরিকরা দ্রুত এই কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।