ভয়ংকর দালাল চক্রের কবলে ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস — সেবা নয়, চলছে ব্যবসা!

স্টাফ রিপোর্টার :

সরকারি সেবা খাতে জনবান্ধব দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার থাকলেও,ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সেই প্রতিশ্রুতি যেন হারিয়ে গেছে দুর্নীতির ঘূর্ণিপাকে। সরকারি এই অফিস এখন যেন পরিণত হয়েছে ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে—যেখানে ঘুষ ছাড়া ‘সেবা’ পাওয়া মানেই দুরাশা! সরাসরি আবেদন মানেই হয়রানি! ভুক্তভোগীদের অভিযোগ—যদি কোনো আবেদনকারী দালালের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি আবেদন করেন, তাহলে শুরু হয় হয়রানির মহড়া। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে নানা অজুহাত দেখিয়ে আবেদন বাতিল করা হয়, আবার কখনও সামান্য ভুল ধরিয়ে নতুন করে ফাইল জমা দিতে বলা হয়। একেক ধাপে একেক অজুহাত—শেষ পর্যন্ত আবেদনকারী বাধ্য হন দালালের দ্বারস্থ হতে।

ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত সেবা প্রত্যাশীরা বলেন,“আমরা একেকজন একেক জায়গা থেকে আসি,তাই ঐক্য গড়ার সুযোগ নেই। একা একা প্রতিবাদ করলে শুধু হয়রানি বাড়ে। শেষ পর্যন্ত ঘুষ না দিলে পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব হয় না।” দালাল সিন্ডিকেটের নেপথ্যে অফিসের লোকজন! –জাতীয় লেভেলের অপরাধ বিভাগের একটি সাংবাদিক অনুসন্ধান টিমের নীরব পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে ভয়ংকর সব তথ্য। অফিসের অভ্যন্তরে কর্তৃপক্ষের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট—যার নেতৃত্বে রয়েছেন কথিত এক রহিম নামের ব্যক্তি। এই রহিমের অধীনে জমা হওয়া আবেদনপত্রগুলোতে বিশেষ কোড বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়,যা কেবল অফিসের নির্দিষ্ট কর্মকর্তা ও দালাল চক্রের সদস্যরাই বুঝতে পারে। সাধারণ মানুষের পক্ষে সেই চিহ্ন বোঝা সম্ভব নয়।

সূত্র জানায়,প্রতিদিন এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা এবং মাসে কোটি টাকার বেশি ঘুষের লেনদেন হয়! অভিযোগের আঙুল উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের দিকে! –ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্র মতে,পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) শাহ মুহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ এবং উপ-সহকারী পরিচালক (এডি) মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন–এর নীরব আশীর্বাদেই এসব চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অফিসের সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং রেকর্ড কিপার দেবাশীষ দাস সরাসরি ঘুষ বণ্টন ও আবেদন ব্যবস্থাপনায় যুক্ত—এমন তথ্যও অনুসন্ধান টিম পেয়েছে। –তবে অভিযুক্তরা কেউই অভিযোগ স্বীকার করতে রাজি নন। তাদের বক্তব্য—“সব অভিযোগ রাজনৈতিক বা প্রতিহিংসামূলক।” সাংবাদিকদেরও ঘুষের ভাগ! ভয়াবহ তথ্য হলো—এই অফিস থেকে নাকি প্রতি মাসে কিছু স্থানীয় সাংবাদিকদেরও দেওয়া হয় নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা,যেন এসব দুর্নীতির খবর প্রকাশ না পায়! ফলে জনগণের দুর্ভোগ প্রকাশ্যে আসার আগেই চাপা পড়ে যায় ঘুষ ও দালালির খবর! দুদক অফিস পাশে,তবুও নীরবতা! সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়—দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয় এই পাসপোর্ট অফিসের পাশের ভবনেই অবস্থিত! তবুও এতবড় অনিয়মের বিরুদ্ধে তারা এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেয়নি। সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছে—“দুদকের চোখে কি এতদিন কিছুই পড়েনি?” সচেতন মহলের ক্ষোভ ও হুঁশিয়ারি– স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পাসপোর্ট অফিসে ঘুষের রাজত্ব বহুদিনের। প্রশাসন ও দুদক একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে—কেউ উদ্যোগ নেয় না। কিন্তু এবার যদি সরকারের হাইকমান্ড বা সেনা গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি তদন্তে নেয়,তাহলে দৃষ্টান্ত স্থাপন সম্ভব।” তারা আরও বলেন,“এই সিন্ডিকেটের দুঃসাহস এখানেই—কারণ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহল থেকে।” ঢাকা ক্রাইম টিমের প্রশংসা: এই ভয়াবহ বাস্তবতা দেশের সামনে তুলে ধরায় ঢাকা ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম–কে অভিনন্দন জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

তাদের মতে—এই প্রতিবেদন প্রশাসনের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট,যদি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আন্তরিক তদন্ত শুরু হয়। আইন ও প্রশাসনের অবস্থান: সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী,পাসপোর্ট ইস্যু প্রক্রিয়ায় কোনো মধ্যস্বত্বভোগীর সুযোগ নেই। প্রত্যেক নাগরিক নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে সরাসরি আবেদন করতে পারেন। তবে সেই নিয়ম বাস্তবে কার্যকর না হওয়ায় সরকার-ঘোষিত “দুর্নীতিমুক্ত সেবা” নীতির সঙ্গে এই বাস্তবতা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। জনগণের প্রত্যাশা: এখন সবার একটাই দাবি—এই অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক। দুদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি নিরপেক্ষ তদন্তে এগিয়ে আসে,তাহলে হয়তো ময়মনসিংহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে দুর্নীতির এই কালো অধ্যায় একদিন মুছে যাবে। অনুসন্ধানী টিমের প্রত্যাশা: সরকারের হাইকমান্ড যেন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়—যাতে জনগণ বুঝতে পারে,রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

নিউজটি আপনার স্যোসাল নেটওয়ার্কে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *